সংবাদকর্মী এম. হোবাইব সজীবের খোলা চিঠি

মহেশখালীর কালারমছড়া শান্তি ফেরার হতে পারে একটি টানিং পয়েন্ট!!!


মাননীয় কক্সবাজার জেলা আ.লীগ সভাপতি ও এমপি মহোদয়, কক্সবাজার-২ (মহশখালী-কুতুবদিয়া)
প্রথমে আমার সালাম এবং মহেশখালীর সন্তান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড.সিরাজুল মোস্তফা ও আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক এমপি মহেশখালী-কুতুবদিয়া থেকে নৌকার কাণ্ডারী হিসেবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হওয়ায় প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।

আমি আপনার নির্বাচিত এলাকার মহেশখালী উপজেলার এক সময়ের শান্তির তীর্থস্থান কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহঘোনা গ্রামের বাসিন্দা ও তৎকালিন জমিদার মরহুম খাইরুল্লাহ মাতাব্বরের নাতী হয়। বর্তমানে দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত আছি। আপনার সুযোগ্য ও কাঙ্খিত নেতৃত্বে যখন মহেশখালী-কুতুবদিয়া বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে অবিচলভাবে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, ঠিক সেই সময় আমার মনে হলো আপনাদের মহেশখালীর দুঃখ কালারমারছড়া নামক সন্ত্রাসী জনপদ সম্পর্কে কিছু লিখে জনসম্মুখে তুলে ধরে জ্ঞাত করা খুব জরুরি।

আপনাদের সকল উদ্যোগ ও কর্ম পরিকল্পনা মহেশখালীর কালারমারছড়ার প্রভাবশালী খসরো ও কমলাবর দুটি গোষ্ঠীর মধ্যকার দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ ও উত্তেজনা এই অঞ্চলের সকল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের অবদানকে প্রায় ম্লান করে দিচ্ছে। এই সংঘাত এলাকার আধিফাত্য বিস্তারের সংঘার্ত হলেও দুই গ্রুফের লোকজন ফাঁয়দা লুটার জন্য রাজনৈতিক সংঘাত বলে প্রচার করে বেড়ায়। ফলে এই অঞ্চলের মেধাবী তরুণ ও যুব সম্প্রদায় অত্যন্ত শান্তি প্রিয় হলেও চলমান সন্ত্রাস ও নৈর্রাজ্যের কারণে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশ শিক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে সন্ত্রাসের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে অহরহ। উক্ত এলাকায় এক পক্ষ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে অপর পক্ষকে এলাকা থেকে বিতাড়িত হতে হয় জনশ্রুতি আছে।

একজনের সম্পদ অন্যজনে ভোগ করার রেওয়াজে পরিণিত হওয়ায় এখানকার দাঙ্গা-হাঙ্গামা সামাল দিতে হিমছিম খাচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিকবোদ্ধরা।
অনেকের মতো চলতি উপজেলা নির্বাচনের পর দুই গ্রুপের লোকজনদের সহ অবস্থানে বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে আপনাদের সফল নেতৃত্ব একটি টানিং পয়েন্ট। নিজেদের ঘোষ্টির অস্তিত্ব রক্ষায় তারা এ পদে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ফলে স্থানিয় কিছু দালাল চক্রের নৈপথ্য কুশিলীর কারনে এ দাঙ্গা-হাঙ্গাম লেগে আছে বছরের পর বছর।

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিটি পরিবার, সেই সাথে সুনাম নষ্ট হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার ও এমপি মহোদয় আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। ফলে অপরাধী ছাড়া মেধাবীরা এগিয়ে আসলে বদলে দিতে পারেন কালারমারছড়ার অভিশপ্ত প্রেক্ষাপট। আমি মনে করেছিলাম কলমের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিব প্রিয় কালারমারছড়া-মাতারবাড়ীসহ প্রতিটি প্রান্তরে,প্রতিটি ঘরে ঘরে। তার জন্য ঝূঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কখনো কোনরূপে আপোষ করিনি সন্ত্রাস এবং স্বার্থন্বেষী মহলের সাথে।

গত ১৫ বছর আগে আমি ২০০৪ সালে মহেশখালী নামক সন্ত্রাসের জনপদকে শান্তির জনপদ হিসেবে পরিণিত করার মহান তাগিদে যে কন্টকাকীর্ণ যাত্রা শুরু করেছিলাম তা অদ্যবদি চলমান। এই দীর্ঘ যাত্রা পথে সৎ,নির্ভরযোগ্য খবর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়ার মুল লক্ষ্য ছিল এই জনপদকে উত্তোজনা প্রশমন করে শান্তি ফিরিয়ে আনা।
এছাড়াও অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতার রাজনীতি আমাদের কাবু করছে। রাজনীতি কত সুন্দর একটি শব্দ। মনটা টানে খুব। রাজনীতির রাজার নীতির কারণে মনে এই ব্যাকুলতা। অথচ হালের রাজনীতি মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। রাজনীতির স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও ত্যাগের বিষয়টি বহমান না থাকায় এ অবস্থা। জন-গণকল্যাণে মানুষ আগে রাজনীতি করতেন। মানুষের সমস্যা ও দুঃখের সময় তারা পাশে দাঁড়াতেন। যা পারতেন নিজ থেকে করতেন। সমস্যা বড় হলে অন্যদের সহযোগিতা এনে আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দিতেন। মন-মানসিকতায় তারা অনেক বড় ও উদার ছিলেন। ত্যাগের রাজনীতির কত উদাহরণ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। বনেদি পরিবারের রাজনৈতিকরা নিজের গোলার ধান বিলিয়ে দেওয়ার নজির ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে। জমি বিক্রি করে দল চালাতেন অনেক নেতা। মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অনেকে ভুলে যেতেন নিজের পরিবারের প্রয়োজনটা। পকেটের সব বিলিয়ে অনেক সময় বাড়ি ফিরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন।

একটি উদাহরণ দিয়ে বলি প্রকাশ্যে ও গোপনে আমার দেখা মতে, সকালে বাড়ী থেকে বাহির হয়ে গভীর রাত্রে বাড়ী ফিরেন আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার মাতারবাড়ীর চেয়ারম্যান মাস্টার মোঃ উল্লাহ। তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ভূলে যান নিজের মা,স্ত্রী ছেলে-মেয়ে অর্থাৎ নিজের পরিবারের প্রয়োজনটা। পকেটের সব বিলিয়ে অনেক সময় বাড়ি ফিরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন। তার পরেও তিনি হতাশা হয়নি কোনকালে। জনগণকে বিলিয়ে দিতে পারলে যেন তার মনটা খুশি। সকালে ঘুম থেকে উঠার আগে তার বাড়ির আঙ্গিনা ও উঠানে নারী-পুরুষের তীল ধরনের ঠাঁই থাকেনা প্রতিদিন। তার পরেও তিনি বিচলিত হয়না। কাগজ পত্র সই করে দেন বিচলিত না হয়ে কোন বিনিময় ছাড়া। চেয়ারম্যান মোঃ উল্লাহর আছে পরিবার পরিজন ও বিশাল আত্মীয় স্বজন তার পরেও রাজনৈতি যেন তার ঘর হয় উঠেছে। সকালে বাড়ী থেকে বাহির হয়ে ছুটে যান গ্রামের প্রতিটি প্রান্তরে প্রতিটি ঘরে। খোঁজ নেন সুঃখ দুঃখের সর্বস্তরের মানুষের। কেউ তীরিস্কার করলেও কর্ণপাত করেননা এ সহজ সরল মানুষটি।

মুরুব্বিরা বলেন একজন মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর বড় প্রয়োজন। অনেক রাজনীতিককে দেখা গেছে, ঘরে থাকা স্বল্প চাল-ডাল অসহায়দের মাঝে ভাগ করে নিতে। দেখা গেছে জেলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের বাসার খরচ চালাতে। জেলে গিয়ে নিশ্চিত থাকার কারণে নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামতে ভয় পেতেন না। জেলখানায় তারা যেন ভালো থাকেন, একটি দল সে কাজটা নাকি আজও করে যাচ্ছে। মানুষের কল্যাণে যারা রাজনীতি করেন, সে সংখ্যা আমাদের সমাজে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। উল্টো রাজনীতিক দলের খাতায় নাম লিখে জনগণের কাবিখা, খাবিকাসহ ফকিরের থলের চাল খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলে ১০ টাকা কেজির চাল আজ চোরাইপথে বিক্রি হচ্ছে। চাল আটক হওয়ার খবর আসছে মিডিয়ায়।

হালে যারা রাজনীতি করেন, তাদের অধিকাংশেনর মধ্যে মানব সেবার গুণাবলি খুব একটা নেই। জনসেবার নামে চাপাবাজি আর গলাবাজিই লক্ষণীয়। গণমানুষের দুঃখে দুঃখি রাজনৈতিক নেতা হালে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারা যতটা বলেন, এর সিকি ভাগও যদি জনকল্যাণে করতেন; তাহলে দেশের মানুষ এতটা কষ্টে থাকত না। আমরা আজ জাতীয় ও স্থানিয় পর্যায়ে দেখছি, রাজনীতিকরা এককে অপরকে বিশ্বাস করেন না। একে অপরের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। অথচ তারাই কথায়-কাজে আদর্শ অবস্থানে থাকার কথা। দুঃখজনক হলেও সত্য, যারা আমাদের আদর্শ হওয়ার কথা, তারাই একে-অপরকে বিশ্বাস করেন না। মহান আল্লাহ আমাদের রাজনীতিকদের হেদায়েত দান করুন, আমিন।

লেখকঃ-
এ.এম হোবাইব সজীব
সাধারণ সম্পাদক
কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরাম।
মহেশখালী (কক্সবাজার প্রতিনিধি)
বিজয় টিভি,সিপ্লাস টিভি
দৈনিক পূর্বকোণ ও দৈনিক আমাদের কক্সবাজার।
মোবাইল,০১৮১৫-০৬৪৩৭২